শহর

ইতিহাসের গন্ধে ভরপুর কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো

ডিজি বাংলা ৯ অক্টোবর: শারদীয়া দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাম। বাংলায় কবে,কখন এবং কিভাবে দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল সেই ইতিহাস ঘাটলে উঠে আসে নদীয়া রাজ ভবানন্দ মজুমদারের নাম। বাংলায় দুর্গাপূজার ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তাদের মতে বাংলায় প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা হয় তৎকালীন নদিয়া রাজ ভবানন্দ মজুমদার হাত ধরে। অবশ্য অনেকে একথাও বলে থাকেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পূজার সূচনা হয় মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে।
রাজবাড়ীর দেবী প্রতিমা পুজিতা হন রাজ রাজেশ্বরী নামে। পিতৃপক্ষের অবসানের পর মাতৃপক্ষের যেদিন সূচনা হয়, সেই মহালয়ার দিন থেকেই বোধন ঘরে হোমকুণ্ড জ্বালিয়ে শুরু হয় মাতৃ বন্দনা। মহালয়ার দিন যে হোমকুন্ড প্রজ্বলিত হয়, নবমী পূজো না হওয়া পর্যন্ত সেই হোমকুন্ড নিরবিচ্ছিন্নভাবে জ্বলতে থাকে। ‌
বিভিন্ন দিনে জগৎজননী দূর্গা মাকে ভোগ হিসাবে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য নিবেদন করা হয়। ষষ্ঠীর দিন দেবীকে পাঁচ রকম ভাজা সহ পোলাও নিবেদন করা হয়,সাথে থাকে আলুর দম,পটলের দোর্মা,চাটনি,পাপড়, পায়েস এবং মিষ্টি। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত দেবীকে বিভিন্ন উপাচার সহযোগে ভোগ দেওয়া হয়। সপ্তমীতে দেবীর সামনে সাত রকমের ভাজা সহ অন্নভোগ প্রদান করা হয়। অষ্টমীতে দেবীর অন্ন তালিকায় থাকে পোলাও,ছানার ডালনা সঙ্গে আট রকম ভাজা সেই সাথে নদীয়ার বিখ্যাত মিষ্টি সম্ভার।মাতৃ বন্দনায় নবমী একটি বিশেষ দিন। ঐদিন দেবীকে ইলিশ,চিংড়ি,রুই মাছ ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য সহকারে অন্নভোগ দেওয়া হয়। সাথে থাকে নদীয়ার বিখ্যাত মিষ্টি সমূহ।
চারদিন পিত্রালয়ে বিভিন্ন ধরনের গুরুপাক খাবার খাওয়ার পর দশমীর দিন শ্বশুর বাড়িতে ফেরার দিন দেবীকে হালকা খাবার পরিবেশন করা হয়। ঐদিন দেবীর খাদ্য তালিকায় থাকে শিঙি মাছের ঝোল সহ সাদা ভাত,খই,ফল,দই প্রভৃতি।
জলঙ্গীর(খোড়েরঘাট) ঘাটে দেবীর নিরঞ্জন অনুষ্ঠান হয় সম্পন্ন হয়। মহারাজের আমলে দেবীর নিরঞ্জনের পর নীলকন্ঠ পাখি ছেড়ে দেওয়া হতো। যে পাখি রাজ বাড়িতে গিয়ে ঘোষণা করতো দেবীর নিরঞ্জন পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সে সব ইতিহাস,তারপরেও কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে বর্তমান প্রজন্মের রাজ বংশধর সৌমেশ চন্দ্র রায় এবং তার স্ত্রী অমৃতা রায় জানালেন এখনো পর্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে রাজ বাড়ির নাট মন্দিরে দেবীর আরাধনা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button