এক অভিশপ্ত, অনিশ্চিত, অন্ধকারাচ্ছন্ন, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে অঞ্জনা নদী
ডিজি বাংলা ৪ জানুয়ারি ২০২৫[শনিবার] : নদী বিধৌত নদীয়া জেলা। নদীয়ার বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গা, জলঙ্গি, মাথাভাঙ্গা, ইছামতি, পাগলা চণ্ডীর, মত বড় বড় নদীর পাশাপাশি অঞ্জনা, গুড়িগুড়ি, বেহুলা, সুরধনী, কলিঙ্গ, সাতকুলি, চকাই, যমুনা, মরালি, অলকানন্দা, ইন্দুমতি, পলদা’ র মতো অসংখ্য ছোট ছোট নদী। একসময় সেই সকল নদীর স্নিগ্ধ সলিল প্রবাহে শ্যামল শষ্যে প্রকৃতি পূর্ণতা লাভ করেছে। নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকার রসদ যুগিয়েছে এই সমস্ত নদী প্রবাহ। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর এই নদীগুলির অন্যতম নদী ছিল অঞ্জনা। যে অঞ্জনা নদী স্থান পেয়েছে বিশ্বকবির কবিতায়, “অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনী গাঁয়ে, পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে”৷ কিন্তু প্রকৃতির কোল দিয়ে বয়ে যাওয়া সেই স্রোতস্বিনী আজ কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে। রবীন্দ্রনাথের অঞ্জনা আজ হারিয়ে ফেলেছে তার পূর্বেকার সেই স্বতঃস্ফূর্ত গতি৷ কোথাও বেআইনি নির্মাণ, কোথাও অবৈধ দখল, নদীর পাড় দখল করে কোথাও তৈরি হয়েছে অবৈধ ইট ভাটা, কোথাও দোকানপাট, কোথাও আবার বাঁধ দিয়ে চাষবাসের ফলে ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে গেছে অঞ্জনার পরিসর। সৌন্দর্য হারিয়ে অঞ্জনা এখন কোথাও খাল, কোথাও বা ছোটো নালায় পরিণত হয়েছে ৷
উৎস থেকে মোহনা ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর উৎস স্থল নদিয়া সদর কৃষ্ণনগরের পাশে প্রবাহিত জলঙ্গী নদী।
কৃষ্ণনগর পৌরসভার অভ্যন্তরে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদী খামার শিমুলিয়া, বাদকুল্লা, পাটুলি, চন্দনদহ হয়ে রানাঘাটের কাছে চূর্ণি নদীতে মিশেছে। এটি মূলত জলঙ্গি ও চূর্ণি নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি নদী। একসময় রূপসী অঞ্জনার রূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতার খাতায় স্থান দিয়েছিলেন অঞ্জনাকে। সহজপাঠের পাতায় আজ লিপিবদ্ধ আছে সেই কবিতা।
সঠিক উদ্যেগের অভাব, দ্রুত নগরায়ন, আধুনিকতার অভিশাপ, মানুষের লোভ, প্রশাসনিক উদাসীনতা, সারস্বত সমাজের নীরবতার কারণে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির অতল গহবরে তলিয়ে যাচ্ছে অঞ্জনা৷ এক অভিশপ্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে নদীয়ার অন্যতম জলপ্রবাহ অঞ্জনা। এখনো সব শেষ হয়নি। এখনো আশা আছে।যদি সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় তাহলে হয়তো বাঁচবে অঞ্জনা। নাহলে শুধু কবিতার পাতাতেই থেকে যাবে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর একসময়ের প্রাণোচ্ছ্বল অঞ্জনা ৷