তেহট্টের গ্ৰামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে দিশা দেখাচ্ছে খাসপুর জাগরণী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি
প্রতিনিধি,ডিজি বাংলা: নদীয়ার তেহট্ট ব্লকের একটি ছোট গ্রাম খাসপুর। যখন দেশ স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থনৈতিক অনটনের মধ্যে দিয়ে চলছে তখন ১৯৬৩ সালের ২১শে মে খাসপুর গ্রামের কুলদ রঞ্জন ঘোষ স্থানীয় ২৫ জন সদস্য নিয়ে খাসপুর জাগরণী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির জন্ম দেন। তখন থেকেই গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছে এই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি,গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে আজ যার গুরুত্ব অসীম।
নিতান্তই খড়ের চালায় মাটির ঘরে এই সমবায় কাজ শুরু করে,কিন্তু আজ তার প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা যেকোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সমতুল্য। শুধু নির্মাণের দিক দিয়েই নয় পরিষেবার ক্ষেত্রেও এই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি যেকোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিষেবা প্রদান করে থাকে। এই প্রসঙ্গে ব্যাঙ্কের বর্তমান ম্যানেজার আশিস কুমার ঘোষ জানান,”আমাদের এই সমবায় ব্যাঙ্ক সমস্ত রকমের ডিপোজিট নেয়। এখানে ফিক্সড ডিপোজিট, টার্ম ডিপোজিট সহ আধুনিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সমস্ত রকম সুবিধা পাওয়া যায়। সেভিংস আ্যকাউন্ট, কারেন্ট আ্যকাউন্ট ছাড়াও নেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এন ই এফ টি, আর টি জি এস এবং মানি ট্রান্সফারের সমস্ত রকমের ব্যবস্থা আছে।সব থেকে সুবিধা লক্ষীর ভান্ডার,বয়স্ক ভাতার মতো যেকোনো সরকারি প্রকল্পের টাকা বা আধার কার্ড লিংকের মাধ্যমে যে গ্যাসের সাবসিডির টাকা সবই আমাদের ব্যাংকে গ্রাহকদের একাউন্টে ডাইরেক্ট ঢুকে যায়।”
প্রতিষ্ঠা কালে এই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ২৫ জন যা বর্তমানে ২১০০ জন এবং মোট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬০০০। এই ব্যাঙ্কের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকার অধিক।
কৃষকদের উন্নয়নে এই ব্যাংক প্রশংসার কাজ করে চলেছে বলে দাবি করেন গ্রামের প্রতিটি কৃষক। স্বল্প সুদের হরে কৃষি লোন,কৃষি যন্ত্রাংশ কেনার লোন সহ সরকারি প্রকল্পের টাকা যেমন কিশান ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে কৃষকদের প্রভূত সহায়তা করে এই সমবায়। ব্যাংকে উপস্থিত কিছু কৃষকের থেকে জানা গেলো তারা দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে এই সমবায়ের সাথে যুক্ত এবং এখানকার পরিষেবা, কর্মীদের সহযোগিতা ও ব্যবহারে তারা আপ্লুত।
শুধু কৃষক নয় গ্রামের মহিলাদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতেও এই সমবায় নিরন্তর কাজ করে চলেছে। বর্তমানে এই সমবায়ের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ১৮৬টি যাদের প্রদেয় লোনের পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা জানান,” আমরা লোন নিয়ে এবং ট্রেইং নিয়ে কেউ সেলাই শিখেছি,সেলায়ের মেশিন কিনেছি, কেউ অন্য ব্যবসা শুরু করেছে। এই ব্যাংক আমাদের খুবই অল্প সুদের হারে লোন দেয় যারফলে আমরা আমাদের কাজ বা ব্যবসা করতে পারি আবার অল্প অল্প করে লোনের টাকা মিটিয়েও দিতে পারি। আজ আমরা আর্থিক ভাবে অনেক স্বচ্ছল শুধু এই খাসপুর জাগরণী সমবায় আমাদের পাশে আছে বলে।”
আগামী দিনে এই সমবায়ের কি কি পরিকল্পনা আছে জানতে চাইলে সমবায়ের ম্যানেজার বলেন,” আমরা রাজ্য সরকারের সমবায় দপ্তর থেকে ২৭ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছি। এই সমবায়ের লাগোয়া জমিতে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে আগামী দিনে কৃষকদের স্বার্থে সরকারি মূল্যে সার, বীজ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি যাতে কৃষকরা আমাদের মাধ্যমে পায় তার ব্যবস্থা করা,একটি লজ নির্মাণ করা,একটি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা।”
স্থানীয় মানুষজনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা কমবেশি সকলেই বলেন এই সমবায় ব্যাঙ্ক থাকার কারণে এলাকার মানুষে ভীষণভাবে উপকৃত। খাসপুর গ্রামের গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে খাপুর জাগরণী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ভূমিকা অনস্বীকার্য।