দেশ

স্বাধীনতার হীনতায় নারী স্বাধীনতা

স্বাধীনতা অর্থাৎ স্ব-যুক্ত অধীন অর্থাৎ নিজেই নিজের অধীন। যখন সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন চলছে মহাসমারোহে ,প্রত্যেক ক্লাবে ,মহল্লায় , স্কুলে, কলেজে,সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম দেশাত্মবোধক গান ,নাটক,আবৃত্তি হচ্ছে, তখন বারবার মনে উঠে আসছে একটাই প্রশ্ন যে কেনো আজও শহুরে নারী থেকে প্রান্তিক নারীরা পরাধীনতার জালে আটকে? পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আজও নারীরা কেন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ?

আজকের এই ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ক্ষুদিরাম বসু, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, বিনয়-বাদল-দীনেশ, বাঘা যতীন ,ভগৎ সিং,ঋষি অরবিন্দ-এর মতন বীর বিপ্লবীদের মুখগুলি। দেশ মায়ের অনেক বীর সন্তানের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের দেশের এই স্বাধীনতা, কিন্তু সেই বীর সন্তানদের মধ্যে কজন নারীর নাম আমরা জানি? অথচ তাঁদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। মাতঙ্গিনী হাজরা,সুচেতা কৃপালনী, বাসন্তী দেবী, কল্পনা দত্ত,ভেলু নাচিয়ার, কমলা চট্টোপাধ্যায়, এন. জি. রাঙ্গা ,পার্বতী গিরি, আবাদি বানো বেগম, দুর্গাবাঈ দেশমুখ-এমন আরও নাম আছে যাদের ভূমিকা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একই রকম গৌরবময় অথচ ইতিহাসে তারা উপেক্ষিতা কি শুধুমাত্র নারী বলেই?

এখনো আমরা শুনতে পাই লতার মা লতাকে বলে ,”সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরো”, এখনো কাকলি স্টেশনে নেমে বাবাকে ফোন করে অথবা দাদা আসে নিতে, এখনো প্রচুর নারী প্রতিদিন ধর্ষিতা, লাঞ্ছিতা হয় ।নিজ কর্মস্থলে ধর্ষিতা এবং খুন হওয়ার পর বছর ঘুরে গেলেও বিচার পায়না আমাদের দেশের অভয়ারা,বরং তাদের সংখ্যা বেড়েই চলে। স্বাধীনতার ৭৯ বছরে পদার্পণ করার পরও এখনো দীপক ও রুমা একই অফিসে একই পদমর্যাদায় কাজ করার পরেও রুমা কিন্তু হাজার তিনেক টাকা কম পায় দীপকের থেকে। এখনো কন্যা ভ্রূণ হত্যা হয় , এখনো নারীর যোগ্যতাকে সম্মান না দিয়ে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়।

এই একবিংশ শতাব্দীতেও জ্ঞানত বা অজ্ঞানত একটি মেয়েকে ছোট থেকে এই ভেবেই বড় করা হয় যাতে বড় হয়ে তাকে প্রতিষ্ঠিত ছেলের হাতে সমর্পণ করা যায় ,কিন্তু সেই মেয়েটি নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে তার পায়ে শিকল পরিয়ে দেওয়া হয় সমাজ,সংস্কৃতি,পরিবার সব কিছুর নামে। আজও মেয়েদের নিজস্ব কোনও বাড়ি হয় না। তাদের ঠিকানা হয় বাবার বাড়ী নয় শ্বশুরবাড়ি। নারী সমাজের এমন এক শ্রেণী যারা প্রথমে বাবার অধীন, তারপর স্বামীর অধীন এবং শেষ বয়সে ছেলের অধীন থাকে ,তবে কপাল খুব সুপ্রসন্ন থাকলে বাবা,স্বামী কিম্বা ছেলে স্বাধীনতার উপহার গলায় পরিয়ে দেয় এই বলে যে,”আমি খুব আধুনিক মনষ্ক,আমি তোমাকে অনেক স্বাধীনতা দিচ্ছি,আমার সম্পূর্ণ পারমিশন থাকলো”।

এখনো ,খবরের কাগজে ফর্সা, সুন্দরী, সুশীলা ,গৃহকর্মে নিপুনা, ঘরোয়া পাত্রীর সন্ধান চাওয়া হয়। আর মেয়ের গায়ের রং যদি কালো হয় যৌতুকের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কর্মক্ষেত্রে কোন মেয়ে যদি প্রোমোশন পায় তবে তার কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতার থেকে চরিত্রের বিশ্লেষণ বেশি হয়। তাই আজকে দেশ স্বাধীনের ৭৯ বছর পরেও আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ নারী স্বাধীনতার হীনতায় প্রতি মুহূর্তে অপমানিত,লজ্জিত এবং লুণ্ঠিত হয় যাদের খবর কেউ রাখেনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button