ঈশিতাকে খুনের পেছনে জড়িয়ে রয়েছে দেশরাজের পরিবার ও বন্ধুরা!

নিজস্ব সংবাদদাতা, ডিজি বাংলা: ঈশিতা মল্লিক এর খুনের তদন্ত করতে গিয়ে এক চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। কৃষ্ণনগর কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রাক্তন প্রেমিক দেশরাজ প্রতাপ সিংহের সন্ধানে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে বিড়ম্বনা বেড়েছে তদন্তকারীদের। কারণ তারা দেখছেন নিকট আত্মীয় কয়েকজন পুলিশ ,রাজনৈতিক নেতা ,বাহুবলি এবং রাজপুত প্রভাব এই সব রকম সমর্থন জুটিয়ে সেখানে গা ঢাকা দিয়েছে দেশরাজ। পুলিশ এখন ছক সাজাচ্ছে কিভাবে ‘জিজাজি’ দঙ্গল ও মঙ্গল সিংহের ডেরা থেকে পাকড়াও করা যায়। তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে ঈশিতাকে মারার পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে। সিং পরিবারের লোকেদের ভূমিকা সেখানে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে।
আধিকারিকরা জানান দেশরাজের উগ্র ও অমানবিক স্বভাবের জন্য লাঞ্ছিত ঈশিতা গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন । এরপরে শুরু হয় হুমকি এর পাশাপাশি ভিডিও কলে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়েও ভয় দেখায় দেশরাজ । এসব না মেনে নিতে পারায় ঈশিতা এপ্রিল-মে মাস নাগাদ মোবাইল ও বিভিন্ন সমাজ মাধ্যম থেকে দেশরাজকে ব্লক করে । এরপর ঈশিতাকে হাতে রাখতে দেশরাজ কৃষ্ণনগরের এক কলেজে ডিসট্যান্স লার্নিং এ ভর্তি হয়ে যায়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন কোনোমতেই ঈশিতাকে বাগে আনতে না পারায় উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা দেশরাজ তার প্রেমিকাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব নিপুন ও কৌশলে এই ষড়যন্ত্র মোতায়েন করা হয়। এই কাজে দেশরাজকে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছিল দেশরাজের উত্তরপ্রদেশের এক গ্যাংস্টার বন্ধু নীতিন প্রতাপ সিং । নীতিন গত ১৯শে আগস্ট কাঁচরাপাড়ায় দেশরাজের ভাড়া বাড়ি ধরমপুর কলোনিতে এসেছিল। পুলিশ জানান ঈশিতার খুনের জন্য যে ‘নাইন এম এম’ পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছিল তা উত্তর প্রদেশ থেকে নীতিন নিয়ে এসেছিল । ২৪ শে আগস্ট যে টিকিটে দেশরাজের দেওরিয়া ফিরে যাওয়ার কথা ছিল সেই টিকিটে নীতিন ফিরে যায়।
তদন্তকারীরা জেনেছেন নীতিনের ভাই অনুরাগ প্রতাপ সিং মূক ও বধির, তার নামে তোলা সিমকার্ড মোবাইলে ভরে এনেছিল নীতিন। যাতে টাওয়ার লোকেশন পেলে পুলিশ একজন মূক ও বধির কে সন্দেহ করবে না । এছাড়াও পুলিশ বলেছে এই ষড়যন্ত্র ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে দেশরাজের মায়ের ভূমিকাও । তদন্তকারীদের দাবি দেশরাজ ঈশিতাকে খুন করার আগে ১৩ই আগস্ট তার মায়ের হাতে পুরনো নম্বরের মোবাইলটা পাঠিয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশে। লক্ষ্য ছিল টাওয়ার লোকেশন দেওড়িয়া দেখানো। এরপর তার দ্বিতীয় মোবাইলটি নিষ্ক্রিয় করে রেখে দেয় কাঁচরাপাড়ার ভাড়া বাড়িতে , এবং খুনের পর তৃতীয় ফোনটি ব্যবহার করেছিল ও সেটি বরাকরের শৌচালয়ে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। এই ঘটনার কিছুদিন আগেই দেশরাজ ভিডিও কনফারেন্স কলে ঈশিতা, ঈশিতার কয়েকজন বান্ধবী এবং নিজের কয়েকজন বন্ধুকে জানিয়ে দেয় যে দেশরাজ বরাবরের মতো উত্তরপ্রদেশে ফিরে যাচ্ছে। নিখুঁতভাবে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে যে দেশরাজ প্রতাপের হাত রয়েছে, খুনের দিন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, রতন ঘোষ এর মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তার ছবি বন্দি না হলে জানাই যেত না।