জেলা

কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে “রানীকুঠি”

ডিজি বাংলা ৩ ডিসেম্বর ২০২৪: রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত এবং সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর বসতবাড়ি “রানি কুঠি।” কৃষ্ণনগরের ডন বক্স রোডের পাশে কৃষ্ণনগর পৌরসভার অধীন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মেরি ইমাকুলেট হাসপাতালের উত্তর দিকে একটি বড় মাঠের একপ্রান্তে অবহেলিত অবস্থায় কালের গর্ভে হারিয়ে যাবার অপেক্ষায় দণ্ডায়মান “রানিকুঠি।”
স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ আমলে কৃষ্ণনগরের এই এলাকাটি পরিচিত ছিল হোয়াইট টাউন নামে। এই বাড়িটি মূলত ছিল এক শ্বেতাঙ্গ সাহেবের বসত  বাড়ি। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথা সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর পিতা দূর্গাদাস চৌধুরী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে কৃষ্ণনগরে আসেন এবং তার ছেলে মেয়েদের পড়াশুনোর সুবিধার্থে এই বাড়িটি কেনেন। এই বাড়িতেই শৈশব,কৈশোর এবং যৌবন কাটে বাংলা সাহিত্যের “বীর বল” প্রমথ চৌধুরীর।
উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কবি,সাহিত্যিক,নাট্যকার,গীতিকার, সুরকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, বাংলার শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত রামতনু লাহিড়ী, কবি,গীতিকার,সুরকার ও গায়ক অতুলপ্রসাদ সেনের মতো বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির পদধূলি ধন্য এই বাড়ি।  রবীন্দ্র পদধূলিতেও ধন্য হয়েছিল এই বাড়ির আঙিনা। যদিও সেই সময় এই বাড়ির নাম রানীকুঠি ছিল না। বিংশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে এই বাড়িটির নাম হয় ‘রানিকুঠি’।
২০১৮ ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশন রাণীকুঠিকে হেরিটেজ ভবন হিসাবে ঘোষণা করে।
শুধুমাত্র ঘোষণা করেই কর্তব্য সম্পন্ন করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশন। রানিকুঠির সংস্কার এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগই এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। জরাজীর্ণ এই বাড়ির ছাদের একাংশ কয়েক বছর আগেই ভেঙে পড়েছে। দরজা-জানলা গুলির জীর্ণ দশা দেখলে মনে হয় কোন এক ভুতুড়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। অনেক আগে থেকেই বাড়িটি এভাবে পড়ে রয়েছে। বাড়িটির কোনো কিছুই আর অক্ষত নেই। সমগ্র বাড়িটি এবং তার আশপাশ লতাপাতা, গুল্ম, আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রশাসন নির্বিকার। নির্বিকার কৃষ্ণনগরের সারস্বত সমাজ। কোন উদ্যোগ নেই সংস্কারের। কোন উদ্যোগ নেই ভবনটিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলে নদীয়ার পর্যটনের মানচিত্রের স্থান দেবার। বিদ্যজনের পদধূলি ধন্য কৃষ্ণনগরের গর্ব “রানিকুঠি” কালের গহ্বরে বিলীন হবে হবার অপেক্ষায় দণ্ডায়মান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button